এবার রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় ব্যাংকের এমডিকে একসঙ্গে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) একসঙ্গে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই দিনে এতজন এমডিকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার এমডিদের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে ব্যাংক ছয়টির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানদের চিঠি দিয়েছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে—সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা, বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)।
একসঙ্গে কেন সবাইকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব অমল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা সরকারের বিষয়।’
তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অন্য সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোর পর্ষদ নতুন করে সাজানো হচ্ছে। আগে বদলানো হয়েছে চেয়ারম্যানদের। এরপর বদলানো হয়েছে এবং হচ্ছে পরিচালক অর্থাৎ পর্ষদ সদস্যদের। এবার হাত দেওয়া হয়েছে এমডিদের ব্যাপারে। ভেতরে-ভেতরে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগ পাওয়া কোনো এমডিকেই রাখা হবে না।
ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানদের উদ্দেশে একই ভাষায় লেখা চিঠিতে শুধু যাঁর যাঁর ব্যাংকের এমডির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে, এমডি মো. আফজাল করিমের সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদের সম্পাদিত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিলের জন্য সরকারের সুপারিশ/সম্মতি জানানো হলো। তাঁর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিলের বিষয়ে পরের কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, এমডির চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিলের বিষয়ে তিনি চিঠি পেয়েছেন।
আফজাল করিম ২০২২ সালের আগস্ট থেকে দুই বছরের বেশি সময় ধরে সোনালী ব্যাংকের এমডি হিসেবে আছেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) এমডি ছিলেন।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে জনতা ব্যাংকের এমডি মো. আবদুল জব্বার। এর আগে তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) এমডি ছিলেন। তারও আগে ছিলেন জনতা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি)।
অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মো. মুরশেদুল কবীরও ২০২২ সালের আগস্ট থেকে দায়িত্বে আছেন। এর আগে তিনি সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি ছিলেন। তারও আগে তিনি ছিলেন জনতা ব্যাংকের ডিএমডি।
রূপালী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরও ২০২২ সালের আগস্ট থেকে দায়িত্বে।
২০২১ সালের এপ্রিল থেকে বেসিক ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দেন মো. আনিসুর রহমান। এর আগে তিনি অগ্রণী ব্যাংকের ডিএমডি ছিলেন। এ বছরের ৩১ মার্চ তিন বছরের নিয়মিত মেয়াদ শেষ হলে তাঁকে আবার এক বছরের জন্য বেসিক ব্যাংকের এমডি নিয়োগ দেওয়া হয় গত ১১ এপ্রিল।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) এমডি মো. হাবিবুর রহমান গাজী ব্যাংকটিতে যোগ দেন ২০২২ সালের নভেম্বরে। এর আগে তিনি অগ্রণী ব্যাংকের ডিএমডি ছিলেন।
বেসিক ব্যাংক ছাড়া অন্য পাঁচ ব্যাংকের এমডিরা নিয়োগ পেয়েছিলেন তিন বছরের জন্য। নিয়োগের তারিখ থেকে গতকাল তাঁদের চুক্তি বাতিলের সুপারিশের দিন পর্যন্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পাঁচ ব্যাংকের এমডিরই চাকরির মেয়াদ বাকি ছিল গড়ে এক বছর করে। আর বেসিক ব্যাংকের এমডির মেয়াদ ছিল সাত মাস।
বেসিক ব্যাংকের এমডি আনিসুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, তিনি জেনেছেন যে তাঁর মেয়াদের বাকি সময় বাতিল করা বিষয়ক চিঠি পর্ষদে এসেছে। এর বাইরে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী প্রথম আলোকে বলেন, এটা তো ঠিক যে ব্যাংক খাতে বড় ধরনের দুর্বলতা ছিল, যার পেছনে আছে এ ছয় ব্যাংক। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিসহ ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা আনতে গত দুই বছরে তাঁদের কোনো অর্জন চোখে পড়েনি। মোটকথা, তাঁদের পারফরম্যান্স ভালো ছিল না। সরকারের এখন দায়িত্ব হবে ভালো ব্যাংকার খুঁজে ব্যাংকগুলোয় নিয়োগ দেওয়া।