‘টস’, ‘আলসেমি’—লিভারপুল–পিএসজি ম্যাচে পার্থক্য গড়েছে যা কিছু
গ্যারি নেভিলের ক্যারিয়ার কেটেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। খেলোয়াড়ি জীবনে তাই স্বাভাবিকভাবেই তাঁর লিভারপুলের মঙ্গল চাওয়ার কথা নয়। খেলা ছাড়ার পর নেভিল ফুটবল পণ্ডিত হওয়ার পর কেউ কেউ ভাবতে পারেন, এখন অন্তত লিভারপুল নিয়ে দু-একটা ভালো কথা বলবেন। কিন্তু ইউনাইটেড যাঁর রক্তে, তিনি তা পারেন কীভাবে! চ্যাম্পিয়নস লিগে লিভারপুল কাল রাতে মাঠে নামার আগে নেভিল স্কাই স্পোর্টস পডকাস্টে বলে রেখেছিলেন, অ্যানফিল্ডের ক্লাবটির এবার ‘ট্রেবল’ জয়ের সম্ভাবনা তিনি দেখেন না।
লিগ কাপের ফাইনালে উঠেছে লিভারপুল। হাতে ৯ ম্যাচ রেখে দ্বিতীয় দলের সঙ্গে ১৫ পয়েন্ট ব্যবধানে শীর্ষে আছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ পয়েন্ট টেবিলেও। কেউ কেউ এখনই অবশ্য লিভারপুলকে লিগজয়ী হিসেবে দেখছেন। ভাবখানা অনেকটাই এমন যে এখন চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারলেই ট্রেবল জয়টা হয়ে যায়!
নেভিলের আপত্তিটা ছিল ঠিক এখানেই। শেষ ষোলো পেরিয়ে লিভারপুলকে তিনি কোয়ার্টার ফাইনালে দেখেননি। ঘটলও ঠিক তা–ই। দুই লেগ মিলিয়ে ১-১ গোলে সমতার পর টাইব্রেকারে পিএসজির কাছে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নেওয়ায় ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয়েছে আর্নে স্লটের দলকে। গত বছর মে মাসে স্লট অ্যানফিল্ডে কোচ হয়ে আসার পর এটাই প্রথম বড় বিপর্যয় লিভারপুলের।
শেষ ষোলোর প্রথম লেগ ১-০ গোলে জিতেছিল লিভারপুল। কাল রাতে ফিরতি লেগ একই ব্যবধানে জিতেছে পিএসজি। ১২ মিনিটে পিএসজি তারকা উসমান দেম্বেলের করা গোলে লিভারপুল অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইকের ‘আলসেমি’কে দুষেছেন ইংল্যান্ড ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি ওয়েইন রুনি।
ম্যাচ শেষে স্লট তাঁর দলের খেলাকে ‘পারফেক্ট গেম’ বলে মনে করলেও সেখানে খুঁত খুঁজে পাচ্ছেন সাবেক এই স্ট্রাইকার। লিভারপুলের সবচেয়ে বড় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব ইউনাইটেড ও এভারটনে খেলা রুনির মতে, পিএসজির গোলদাতা দেম্বেলেকে বেশি জায়গা দিয়ে ফেলেছেন ফন ডাইক।
রুনির ভাষায়, ‘লিভারপুলের দৃষ্টিকোণ থেকে গোলটি বিভিন্ন দিক থেকে ভুল। তারা (পিএসজি) প্রেস করছিল—ফন ডাইক আলসেমি করেছে। ফন ডাইককে খেয়াল করলে দেখবেন, (দেম্বেলেকে) প্রচুর ফাঁকা জায়গা দিয়েছে। এই পর্যায়ে এক সেকেন্ড ঢিলেমি করলেও শাস্তি পেতে হয়।’
টাইব্রেকারে দারউইন নুনিয়েজ ও কার্টিস জোন্সের শট ঠেকান পিএসজি গোলকিপার জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা। রুনি বলেন, ‘দুই লেগ মিলিয়ে পিএসজিই শ্রেয়তর দল...পেনাল্টিও অসাধারণ। বোঝাই যাচ্ছে, পিএসজি পেনাল্টি নিয়েও অনুশীলন করেছে।’
লিভারপুল যে অনুশীলন করেনি, তা নয়। তবে ভাগ্যও সহায়তা করেছে পিএসজিকে। টাইব্রেকারের কয়েন টসে জেতেন দোন্নারুম্মা। যে পোস্টের পেছনে লিভারপুল ও পিএসজির সমর্থকেরা পাশাপাশি অবস্থান করছিলেন, টাইব্রেকার ঠেকাতে অ্যানফিল্ড রোড ইন্ডের সেই পোস্ট বেছে নেন। অন্য পোস্টের পেছনে ঘাঁটি গেড়েছিলেন লিভারপুলের কট্টর সমর্থকেরা।
স্বাভাবিকভাবেই পিএসজির সমর্থকেরা যে পোস্টের পেছনে অবস্থান করছিলেন, সেখানে দোন্নারুম্মার সুবিধা পাওয়ার কথা। কারণ, পিএসজির সমর্থকেরাও থাকায় লিভারপুলের সমর্থকেরা ওই পোস্টে ঝামেলা করতে পারবেন কমই। আজেবাজে মন্তব্যও সেভাবে শুনতে হয়নি, যেটা অন্য পোস্টে হওয়ার ঝুঁকি ছিল।
লিভারপুলের সাবেক স্ট্রাইকার ড্যানি স্টারিজ মনে করেন, তাঁর সাবেক দল ভালো খেললেও পারফরম্যান্সটা কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। পিএসজিকে কৃতিত্ব দিতেই হবে।
ম্যাচ শেষে টলমল চোখে মাঠ ছেড়েছেন মোহাম্মদ সালাহ। এ মৌসুম শেষেই লিভারপুলে তাঁর চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে। এখনো নতুন চুক্তি সই না করায় কে জানে, কালকের রাতটিই হয়ে যেতে পারে লিভারপুলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে তাঁর শেষ রাত!
অ্যানফিল্ডের যে পোস্টের পেছনে লিভারপুলের কট্টর সমর্থকেরা (কপ) বসেছিলেন, সেখানে ছিলেন ক্লাবটির সাবেক ডিফেন্ডার ক্যারাঘারও। তাঁর মুখটাও বিমর্ষ ছিল। ম্যাচ শেষে মাঠ থেকেই সিবিএস স্পোর্টসকে ক্যারাঘার বলেছেন, ‘সেরা দলই জিতেছে...অতিরিক্ত সময় চালকের আসনে ছিল পিএসজি।’