আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক দেশ, ছিলো ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। সেই পাকিস্তানই কি না ৮ দলের মধ্যে হলো অষ্টম। গ্রুপ পর্বে কোনো ম্যাচ না জিতেই বিদায় নিতে হলো। শুধু তাই নয়, অত্যন্ত বাজে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। যে কারণে যারপরনাই ক্ষুব্ধ দেশটির সাবেক ক্রিকেটাররা।
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক, বুমবুমখ্যাত শহিদ আফ্রিদি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হওয়া ক্রিকেটারদের একজন। তিনি মন্তব্য করে দিলেন, ‘পাকিস্তান ক্রিকেট এখন রয়েছে আইসিইউতে।’ কেন তিনি এমন মন্তব্য করলেন? সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। বললেন, ‘সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণেই মূলত আইসিইউতে পৌঁছে গেছে।’
সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তি অলরাউন্ডার শহিদ আফ্রিদি মূলত পাকিস্তানের পুরো ক্রিকেট ব্যবস্থারই সমালোচনা করেছেন। ক্রিকেটারদের চেয়ে তার সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। আফ্রিদি দাবি করছেন, এখানে শুধুমাত্র মানুষগুলো পরিবর্তন হয়, কিন্তু পরিস্থিতি সেই একই থাকে।’
আফ্রিদির প্রশ্ন পাকিস্তান দলে কেন শাদাব খান?
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য যে দল ঘোষণা হয়েছে, সেখানে ফিরিয়ে আনা হয়েছে অলরাউন্ডার শাদাব খানকে। সালমান আলি আগা অধিনায়ক এবং শাদাব খানকে করা হয়েছে সহ-অধিনায়ক। শহিদ আফ্রিদি তুমুল সমালোচনা করলেন এ সিদ্ধান্তের।
আফ্রিদি বলেন, ‘কিসের ভিত্তিতে শাদাব খানকে দলে নেয়া হয়েছে? ঘরোয়া ক্রিকেটে তার পারফরম্যান্স কী? অন্য কোন কারণে তাকে দলে ফিরিয়ে আনা হলো?’
পাকিস্তান ক্রিকেট এখন আইসিইউতে
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম রাউন্ডই পার হতে পারেনি, যা এটি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান মাহসিন নাকভির জন্য বড় একটি ধাক্কা খাওয়ার মত। মূলত তিনি গত কয়েক মাস ধরে দাবি করে আসছিলেন, যে এবার টুর্নামেন্টের জন্য তারা ভালো দল গঠন করেছেন। এই প্রেক্ষিতেই আফ্রিদি নাকভিকে একহাত নিয়েছেন।
একটি ইভেন্ট চলাকালীন মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময়ে শহিদ আফ্রিদি বলেন, ‘সব সময়ই আমরা প্রস্তুতির কথা বলে থাকি; কিন্তু যখন একটি ইভেন্ট আসে এবং আমরা ফ্লপ হই, তখন বলা হয় অস্ত্রোপচারের কথা। ফ্যাক্ট হলো, পাকিস্তান ক্রিকেট এখন আইসিইউতে রয়েছে। কারণ, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারা।’
পিসিবি চেয়ারম্যান মাহসিন নাকভির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকবারই যিনি পিসিবি চেয়ারম্যান হন, তিনিই মনে করেন যে, সব কিছু ঠিক করে দিতে পারবেন। কিন্তু মানুষ বদলে গেলেও, সিস্টেমের কেন বদল হয় না। বোর্ডের সিদ্ধান্ত এবং পলিসির কোনো ধারাবাহিকতা নেই, কোনো নিয়ম-নীতি নেই।’
অধিনায়ক পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন
শুধু তাই নয়, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচক কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শহিদ আফ্রিদি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণার পাশাপাশি, নির্বাচক কমিটি মোহাম্মদ রিজওয়ানকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয় এবং তার জায়গায় আগা সালমানকে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেন।
আফ্রিদি এ সিদ্ধান্তে একেবারেই খুশি নন এবং তার দাবি, ‘আমরা একের পর এক অধিনায়ক পরিবর্তন করি। কোচ এবং কিছু খেলোযাড়ও পরিবর্তন করি। কিন্তু তাদের দায়িত্ব কী, জবাবদিহীতা আছে কি না সে সব সামনে আসা দরকার। বোর্ডের কর্মকর্তাদেরও তো কোনো জবাবদিহিতা নেই।’
নিয়মিত কোচ এবং অধিনায়ক পরিবর্তনের সমালোচনা করে আফ্রিদি বলেন, ‘আমাদের ক্রিকেট কিভাবে এগুবে? যখন কোচ এবং অধিনায়করা দেখেন তাদের ঘাড়ের ওপর খোলা তরবারি ধরে রাখা হয়েছে।’
পিসিবি চেয়ারম্যান নাকভি ক্রিকেট সম্পর্কে কিছুই জানেন না
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারমান মাহসিন নাকভিকে নিয়েও কথা বলেছেন আফ্রিদি। তার মতে, নাকভি একজন ইতিবাচক মানুষ। তবে সত্য হলো তিনি আসলে ক্রিকেট সম্পর্কে কিছুই জানেন না।’
মাহসিন নাকভি নিজেই নিজেই স্বীকার করেছিলেন, তিনি ক্রিকেট সম্পর্কে কম জানেন। আফ্রিদির দাবি, ‘কিছুদিন আগে লাহোরে চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। মাঠের উন্নয়ন, গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে কাজ, সবই বেশ ভালো এবং সুন্দর। তিনি কাজ করেছেন এবং আরও কাজ করতে চান; কিন্তু তিনি এটাও বলেছেন যে, ক্রিকেট সম্পর্কে কিছুই জানেন না। যখন আপনি ক্রিকেট সম্পর্কে জানেন না, তখন আপনার উচিত ভালো, টেকনিক্যাল মানুষদের সঙ্গে কাজ করা, যাদের খেলাধূলার সঙ্গে সম্পর্ক আছে।’
মাহসিন নাকভিকে পরামর্শও দিয়েছেন আফ্রিদি। তিনি বলেন, ‘তিনি পাকিস্তান ক্রিকেটের ভালো করতে চান। তবে তাকে পরামর্শ দেবো, তিনি কখনোই তিনটি কাজ একসঙ্গে করতে পারবেন না। তার প্রয়োজন একটি কাজের দিকে ফোকাস করা। কারণ পিসিবি চেয়ারম্যানশিপ একটি ফুল টাইম জব।’