আজ মঙ্গলবার সকালে দৌলতদিয়া ঘাটেছবি: প্রথম আলো

মাঝনদীতে নোঙর করা ফেরিতে আরেক ফেরির ধাক্কা, অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা

মাঝনদীতে কুয়াশার কবলে পড়ে নোঙর করতে বাধ্য হয় মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা যানবাহন বোঝাই রো রো (বড়) ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর। পরে এতে সজোরে আঘাত করে পাটুরিয়া থেকে আসা ভাষাশহীদ বরকত ফেরি। এতে উভয় ফেরিসহ এতে থাকা দুটি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা যানবাহন পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছিল। আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে পদ্মা নদীতে এ দুর্ঘটনা ঘটনা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত একটি প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ফেরিতে ছিল। এগুলোর চালক ও কয়েকজন যাত্রী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ফেরি দুটি সেখানে প্রায় দেড় ঘণ্টা আটকে রেখেছিলেন। এতে উভয় ঘাটে আটকে থাকা চালক-যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। সাড়ে ৮টার দিকে বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে ফেরি চলাচল আবার শুরু হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত প্রাইভেট কারটির মালিক ও কুষ্টিয়ার বাসিন্দা ফুয়াদ রেজা ফাহিম বলেন, ‘ফেরিটি মাঝনদীতে পৌঁছে কুয়াশার কারণে নোঙর করেছিল। সতর্ক করার পরও আমাদের ফেরিকে অপর ফেরি ডান পাশে আঘাত করে। এতে গাড়িটির পেছনের অংশ ভেঙে যায়। আমরা মনে করি, এটা দুর্ঘটনা না, পরিকল্পিত হত্যাচেষ্টা। সঠিক তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।’

অল্পের জন্য বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত মাইক্রোবাসটির যাত্রী ও রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাসিন্দা হাসান বেপারী। তিনি বলেন, ‘মা, বড় ভাই, বোন, ভাগনে-ভাগনিসহ আমরা ফেরিতে গাড়ির ভেতর বসে ছিলাম। হঠাৎ সজোরে ফেরির রেলিং ভেঙে মাইক্রোবাসে আঘাত লাগে। তখন ভয়ে সবাই চিৎকার করতে থাকি। ভেবেছিলাম ফেরি থেকে গাড়ি ছিটকে নদীতে পড়ে গেছে। অল্পের জন্য আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছেন।’

দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে ভাষাশহীদ বরকত ফেরির মাস্টার (চালক) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কুয়াশায় দূর থেকে হালকা দেখা যাচ্ছিল। তেমন সমস্যা হবে না ভেবেই পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় তীব্র স্রোতের কারণে ফেরির মুখ ঘুরে গিয়ে বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ফেরির সঙ্গে আঘাত লাগে। আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেও পারিনি। এটা দুর্ঘটনা ছাড়া কিছুই নয়।’

দুর্ঘটনায় বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ফেরির রেলিং, মুলেন, তেলের পাইপ, তেলের ট্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান মাস্টার (চালক) হাসান আলী। তিনি বলেন, সকাল ৬টা ২৫ মিনিটের দিকে পাটুরিয়া থেকে ৭টি ট্রাক, একটি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসসহ যাত্রী নিয়ে ছেড়ে ফেরিটি নিয়ে ছেড়ে আসা হয়। ঘটনাস্থলে ফেরিটিকে (ভাষাশহীদ বরকত) কাছে আসতে দেখে মাইকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু ৭টা ৬ মিনিটের দিকে অতিক্রম করার সময় ওই ফেরির আঘাতে পকেট গেট ভেঙে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসে আঘাত করে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) নাছির মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, উভয় পক্ষের কথা শুনে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত ভাষাশহীদ বরকত ফেরির মাস্টারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।