Advertisement
  • হোম
  • বাণিজ্য
  • শেয়ারবাজারে দুর্নীতির রাঘববোয়াল সালমান-খায়রুল-শিবল...

শেয়ারবাজারে দুর্নীতির রাঘববোয়াল সালমান-খায়রুল-শিবলী

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫

24obnd

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেখ হাসিনার পুরো শাসনামলে দেশের শেয়ারবাজার ছিল লুটপাটের অন্যতম টার্গেট। আর্থিক খাতে ব্যাংক লুট ও দখলের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে কারসাজির মাধ্যমে লাখ লাখ সাধারণ বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে গুটিকয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান লুটে নেয় এক লাখ কোটি টাকার বেশি।

অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র কমিটির রিপোর্টে হাসিনার আমলে শেয়ার কেলেঙ্কারিতে ‘প্রভাবশালীদের’ সম্পৃক্ততার কথা বলা হলেও তারা কারা- সে বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। তবে আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমান নেতৃত্ব দিয়েছেন শেয়ারবাজার লুটের। তার সহযোগী হিসেবে কারসাজিতে নাম এসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) শীর্ষ কর্মকর্তাদের। ডিএসইর তৎকালীন প্রধান রকিবুর রহমান গং শেয়ারবাজার জালিয়াতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন।

মূলত প্রতারণা, কারসাজিসহ প্লেসমেন্ট শেয়ার এবং আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে মহাবিপর্যয়ের পর পুনর্গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেন এবং পরে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন শেয়ারবাজারের কাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা জানান, ক্ষমতার প্রভাব বলয়ের মধ্যে গড়ে ওঠা নানা ধরনের সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশে শেয়ারবাজারকে লুটপাটের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন খায়রুল হোসেন ও শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। তাদের লুটপাট আর অনিয়মের কারণে নিঃস্ব হয়ে বাজার ছেড়ে চলে গেছেন বহু বিনিয়োগকারী। কিন্তু এত লুটপাট ও অনিয়মের পরও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডিএসইর একাধিক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, খায়রুল ও রুবাইয়াত কমিশনের আমলে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির নামে বাজারে ‘বিষ’ সঞ্চালন করা হয়েছে। অচিরেই তারা এদের বিচারের কাঠগড়ায় দেখতে চান। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কীভাবে অভিযুক্তরা বিচারের বাইরে রয়েছেন? প্রশ্ন করেন তারা। অন্তর্বর্তী সরকারের কারো সঙ্গে ‘সম্পর্কের জেরে’ এরা এখনো মুক্ত জীবনযাপন করছেন বলে সন্দেহ সংশ্লিষ্টদের।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে খায়রুল হোসেন ও শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামকে কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠিয়ে মতামত জানতে চাইলেও সাড়া দেননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খায়রুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা জীবন সমাপ্ত করে অবসরে গেছেন। শিবলী রুবাইয়াত ফের বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন। তবে তিনি ক্লাসে যাচ্ছেন না। উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য শিক্ষা ছুটি চেয়ে আবেদন করেছেন। তবে তার বিদেশযাত্রায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এদিকে শিবলী রুবাইয়াতের পাসপোর্ট বাতিল করেছে সরকার।

জানতে চাইলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, গত এক-দেড় দশকে পুঁজিবাজারে দক্ষ ও সৎ নেতৃত্ব ছিল না। যারা ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, গত দেড় দশকে অধিকাংশেরই নিয়োগ হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। ফলে তারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করেননি। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি বিভাগের মতো কাজ করেছে। ফলে নানা ধরনের হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।

শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও আইসিবির চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বলেন, বস্তাপচা কোম্পানির তালিকাভুক্তির মাধ্যমে আইপিও বাজারকে ধ্বংস করেছে খায়রুল হোসেন। আর শিবলী সেকেন্ডারি মার্কেটে জুয়াড়ি তৈরি করেছেন এবং তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছেন। তাদের বিচারের কাঠগড়ায় না দাঁড় করালে শেয়ারবাজারে এ ধরনের অনিয়ম বারবার ঘটবে।

শেয়ারবাজার সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন বলেন, দুই কমিশনের আমলে দুই ধরনের অনিয়ম হয়েছে। অধ্যাপক খায়রুল যে সময় ছিলেন তখন আইপিও মার্কেটে অনেক নামসর্বস্ব কোম্পানির তালিকাভুক্তি হয়েছে।

এতে সালমান এফ রহমানসহ বিশেষ গোষ্ঠীর পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষরাও ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে রুবাইয়াত আমলে আইপিও বাজারের পাশাপাশি সেকেন্ডারি মার্কেটেও নানা অনিয়ম ও কারসাজি করা হয়েছে। সে সময় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক সবকিছুই তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন।

Lading . . .