Advertisement
  • হোম
  • বাণিজ্য
  • যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কে ভারতের লাভ-ক্ষতি কেমন...

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কে ভারতের লাভ-ক্ষতি কেমন হবে

প্রকাশ: ৪ এপ্রিল, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন।ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন।ছবি: এএফপি

বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এই ঘোষণায় বিশ্ববাণিজ্যে নতুন এক পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। কারণ, ট্রাম্পের এই বাড়তি শুল্ক আরোপের প্রভাব পড়বে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনাম–নির্বিশেষে এশিয়া–ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর। তবে এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের ওপর পাল্টা শুল্কের প্রভাব সবচেয়ে কম পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এর মানে, রপ্তানি খাতে তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেতে পারে ভারত।

এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে ভারত ও চীন। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের নয়া শুল্কনীতির ফলে ভারতের কিছু খাত প্রতিযোগিতায় সুবিধাজনক অবস্থানে চলে আসতে পারে। চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ওপর তুলনামূলক উচ্চ হারে পাল্টা শুল্ক বসানোয় বিশ্ববাজারে তাদের চেয়ে ভারত নতুনভাবে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার সুযোগ পাবে। খবর ‘দ্য ইকোনমিক টাইমস’–এর।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে সহজলভ্য নয়, সেগুলো শুল্কের আওতায় আসবে না। এগুলোর মধ্যে রয়েছে তামা, ওষুধ, সেমিকন্ডাক্টর, জ্বালানি, খনিজ, কাঠজাত পণ্য, স্বর্ণ, রুপা, স্টিল বা লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো পণ্য।

তবে বাড়তি শুল্কের কারণে ভারতের বস্ত্র, ইলেকট্রনিক ও প্রকৌশল শিল্প প্রভৃতি মূল খাতের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার ওষুধশিল্প ও কিছু কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশটি তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।

ওষুধশিল্পে স্বস্তি ভারতের

ভারতের ওষুধপণ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। ওষুধশিল্প নতুন শুল্কনীতির আওতায় না পড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় ওষুধের আধিপত্য বাড়বে, যা দেশটির ওষুধ প্রস্তুতকারকদের জন্য একটি স্বস্তির বার্তা।

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, ভারতীয় স্টিল বা লোহা, অ্যালুমিনিয়াম ও অটোমোবাইল–সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলোর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে ফার্মাসিউটিক্যালস, সেমিকন্ডাক্টর, কপার ও জ্বালানি পণ্য শুল্কমুক্ত থাকছে।

কৃষিপণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা

ভারতীয় কৃষিপণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে কৃষি খাতে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর ওপর ভারতের চেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ কৃষিপণ্য রপ্তানিতে অন্যদের তুলনায় ভারত ভবিষ্যতে স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখতে পারবে।
ভারতের কৃষি অর্থনীতিবিদ অশোক গুলাটি বলেন, বিশেষ করে চিংড়ি রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত তুলনামূলক শুল্ক সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে চিংড়ির চাহিদা কম। ফলে এর চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমার আশঙ্কা নেই। ফলে ভারতীয় সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বড় ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হবে না; বরং অন্যান্য দেশের তুলনায় কৃষিপণ্য রপ্তানিতে কিছুটা বাড়তি সুবিধা পাবে ভারত।

ইলেকট্রনিক ও বস্ত্র খাতে সুযোগ

আঞ্চলিকভাবে অন্যান্য দেশের তুলনায় শুল্কের চাপ কম হওয়ায় অন্যান্য দেশের চেয়ে ইলেকট্রনিক ও বস্ত্র খাতে ভারত কিছুটা সুবিধা পাবে।

ব্রাজিল ও মিসরের মতো কিছু দেশের উপর কম শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ভারত চীন ও ভিয়েতনামের তুলনায় তারা ভালো অবস্থানে রয়েছে। নতুন শুল্কনীতিতে চীন ৫৪ শতাংশ ও ভিয়েতনাম ৪৬ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হচ্ছে। ইন্ডিয়া সেলুলার অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস অ্যাসোসিয়েশন (আইসিইএ) বলেছে, এতে ভারতের জন্য রপ্তানি প্রতিযোগিতায় একটি স্বল্পমেয়াদি সুযোগ তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ভারতের টেক্সটাইল তথা বস্ত্রপণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতের টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৬ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ২৮ শতাংশ বা ১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের বস্ত্র রপ্তানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যেখানে এই হার ছিল ২১ শতাংশ, সেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা বেড়ে ২৫ শতাংশে এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৯ শতাংশে উঠেছে।

ই-কমার্স খাতে সম্ভাবনা

পাল্টা শুল্ক আরোপের পাশাপাশি ট্রাম্প আরেকটি বড় সিদ্ধান্ত হিসেবে ‘ডি মিনিমিস’ শুল্কসুবিধা বাতিল করেছেন। ডি মিনিমিস শুল্ক পদ্ধতিতে ৮০০ ডলারের কম মূল্যের পণ্যকে শুল্কমুক্তভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হতো।

তবে এই বাড়তি শুল্ক আরোপ চীনের ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর ওপর বড় প্রভাব ফেলবে। শিন ও টেমুর মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো এই সুবিধার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে লাভজনক অবস্থানে রয়েছে।

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ই-কমার্সে চীনের প্রতিযোগিতা কিছুটা কমতে পারে। ফলে ভারতীয় ই-কমার্স রপ্তানিকারকদের জন্য কিছুটা সুযোগ তৈরি হতে পারে।

নতুন শুল্ক কাঠামোর ফলে ভারতের জন্য একদিকে চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে, অন্যদিকে নতুন সুযোগও তৈরি হয়েছে। ২৬ শতাংশ শুল্কের কারণে কিছু রপ্তানি খাত চাপে পড়তে পারে। তবে ইলেকট্রনিক, বস্ত্র ও ওষুধশিল্পের ক্ষেত্রে ভারত প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Lading . . .