প্রকাশ: ২২ এপ্রিল, ২০২৫
শৈশবের আনন্দময় দিনগুলোয় পড়ার চাপ একটা বিপত্তিই বটে। ভবিষ্যতের জন্য তাকে তৈরি করতে চান অভিভাবক। কিন্তু শিশুর মন চায় হাসি-আনন্দে সময় কাটিয়ে দিতে। এই টানাপোড়েনে হোমওয়ার্ক নিয়ে বাড়িতে ছোটখাটো যুদ্ধ বেধে যায় অনেক সময়। তবে হোমওয়ার্কের বিপত্তি সামলানোর উপায় কিন্তু খুব কঠিন নয়।
রোজকার ধরাবাঁধা নিয়মে চলতে কারই–বা ভালো লাগে! নিজের জীবন দিয়েই বিচার করে দেখুন। অফিসে রোজকার কাজ সেরে বাসায় এসে যদি অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে বসতে হয়, আপনার কি ভালো লাগবে? নিশ্চয়ই না। হোমওয়ার্ক শিশুর জন্য একঘেয়ে এক ব্যাপার। পড়ালেখার চাপে যেন শৈশবের রংটা ফিকে হয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখা সবচেয়ে জরুরি। এমনটাই বলছিলেন শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের সিনিয়র ক্লিনিক্যাল ফেলো ডা. টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ।
শিশুকে সারা দিন চাপে রাখবেন না। খেলাধুলার সুযোগ দিন। হোমওয়ার্কটা সে কখন করতে চায়, সে ব্যাপারে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন তার মতামত নিন। সেই সময়ের আগপর্যন্ত তাকে আনন্দে সময় কাটাতে দিন। সে যদি বেশি দেরি করে হোমওয়ার্ক করতে চায়, তাহলে তাকে দেরির ফলাফল ব্যাখ্যা করুন সুন্দরভাবে। মেজাজ দেখাবেন না। দেরি করে পড়তে বসলে ঘুমাতে দেরি হবে, সকালে ঘুম ভাঙতে কষ্ট হবে, স্কুলে যেতে দেরি হবে—এসব বিষয় তার সামনে আনুন। তারপর আবার জানতে চান, তাহলে সে কোন সময়টায় হোমওয়ার্ক করতে চায়। তবু সে দেরি করতে চাইলে আপনি তার কাঙ্ক্ষিত সময়টার চেয়ে আধা ঘণ্টা এগিয়ে আনার প্রস্তাব করতে পারেন। দু-এক দিন না হয় দেরি করেই হোমওয়ার্ক করুক। দেরি করার সমস্যাগুলো সে উপলব্ধি করতে পারবে। তাকে গুরুত্ব দেওয়া হলে সে–ও ইতিবাচক আচরণ করবে।
পড়ালেখা, নাচগান, আঁকাআঁকি সবকিছুতেই শিশুকে সেরা হতে হবে, এমন ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসুন। পড়ালেখাটা জীবনের প্রয়োজন। অন্য কোনো কিছুর প্রশিক্ষণ কেবল সেই শিশুকেই দিন, যে আগ্রহী। সব শিশুকেই দৌড়ঝাঁপের সুযোগ দিন। নিজেরাও যোগ দিন তার কোনো খেলায়। রান্নাবান্না, ঘর গোছানো, গাছের যত্ন–আত্তির মতো কাজে শিশুকে সঙ্গে নিন। সপ্তাহে দুটি দিন যেকোনো কিছু শেখার চাপ থেকেই তাকে মুক্ত রাখুন। ছুটির দিনে সত্যিকার ছুটি হোক তার। বাকি পাঁচ দিনের পড়ার সময়টাও হোক আনন্দময়। পড়ার জায়গাটা সে সাজাতে পারে নিজের মতো করে। টেবিলটা কোথায় রাখলে ভালো হয়, সে ব্যাপারে আলোচনা করুন তার সঙ্গে। সেখানে রাখার জন্য তার পছন্দমতো খেলনা, স্টিকার বা ডায়েরির মতো ছোট্ট অনুষঙ্গ কিনে দিতে পারেন। দু-এক দিন মেঝেতে গড়িয়ে হোমওয়ার্ক করলেও ক্ষতি নেই।
শিশুর ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্যই তো পড়ালেখা। তা যেন তার জন্য দুঃস্বপ্ন বা আতঙ্কের বিষয় হয়ে না দাঁড়ায়। বয়স এবং গ্রহণ করার ক্ষমতা অনুযায়ী পড়ান তাকে। সবাই পরীক্ষায় সেরা হবে না। কিন্তু আপনার সন্তান একজন ভালো মানুষ হোক। মানসিক চাপ থেকে বেঁচে থাকুক। পড়ালেখাটাকে বোঝা বানিয়ে ফেলবেন না। হাসিখেলার মাঝেই হোক শিখন-পঠন। স্কুলের পরে অনেক শিক্ষকের কাছে কিংবা অনেকটা সময় ধরে পড়ানো উচিত নয়। ঘড়ি ধরে পড়ালেখা না করেও জীবনে সফল হয়েছেন, এমন মানুষের সংখ্যা অনেক। স্কুলের শিক্ষকদেরও এই বিষয়ে যত্নশীল হতে হবে। হোমওয়ার্কের চাপে শিশুদের পিষ্ট করা ঠিক নয়। পড়ার মূল বিষয়টা বুঝিয়ে দিন। কখনো কম, আবার কখনো একটু বেশি হোমওয়ার্ক দিয়ে শিশুকে সেটির চর্চা করান। সবার মানসিক দক্ষতা একই রকম হবে না। কেউ একটু পিছিয়ে পড়লে তাকে সাহায্য করুন। উৎসাহ দিন।
আরও পড়ুন