Advertisement
  • হোম
  • বিনোদন
  • নারায়ণগঞ্জ থেকে বাসে ঝুলে নাটক করতে আসা অভিনেতার এ...

নারায়ণগঞ্জ থেকে বাসে ঝুলে নাটক করতে আসা অভিনেতার একাল–সেকাল

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল, ২০২৫

24obnd

ছবিটি ৩০ বছর আগের, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই ছবি পোস্ট করেছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা। বয়সে একেবারেই তরুণ, সেই ছবিটি নাটক ও সিনেমা–সংশ্লিষ্ট সব গ্রুপে ভাগাভাগি করেছেন ভক্তরা। ছবিটির ফেসবুক রিঅ্যাকশন দেখেও এই অভিনেতা অবাক। সেই ছবিটি ঘিরে নেটিজেনরা অনেকে প্রশংসা করলেও কেউ কেউ অভিমানে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। ভক্তদের প্রশংসা ও বিরূপ মন্তব্যের সঙ্গে একমত হয়েছেন অভিনেতা আ খ ম হাসান। ছবিটি ঘিরে দর্শকেরা কেন অতীত প্রসঙ্গ টানছেন?

পুরোনো স্মৃতি হিসেবে ছবিটি পোস্ট করেছেন আ খ ম হাসান। আর সেই ছবি ঘিরে দর্শকেরা এই অভিনেতার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের নাটক নিয়ে কথা বলছেন। অতীতের সেসব নাটকের গল্প, অভিনয় এখনো যেন দর্শকদের প্রাণ জুড়ায়। কিন্তু সেই অভিনেতাকে এখন আগের মতো পর্দায় পাওয়া কষ্ট।

ইমরান হোসাইন নামের এক ভক্ত লিখেছেন, ‘আপনাদের দেখলে আমরা শিখি, আমরা গর্বিত হই। কারণ, অশ্লীল বা নোংরামি না করেও কীভাবে একটা নাটককে ফুটিয়ে তোলা যায়, মনোমুগ্ধকর পরিবেশে অসাধারণ অভিনয় দিয়ে আমাদের উপহার দিয়েছেন আনন্দ। মজার বিষয় হলো, আপনার পুরোনো নাটকগুলো এখনো সার্চ দিয়ে দেখি। সেই আনন্দ পাই।’

ছবিটির নিচে ভক্তরা কেউ লিখেছেন ‘আলতা সুন্দরী’ নাটকের সেই লায়ক মেছের চরিত্রের কথা। কেউ লিখেছেন, ‘রঙের মানুষ’, ‘ভবের হাট’, ‘হাড় কিপটে’, ‘সাকিন সারিসুরি’ নাটকের চরিত্রগুলোর কথা। যেসব নাটক দিয়ে ভিন্নভাবে কোটি ভক্তের মন জয় করেছিলেন। নিরব আলী নামের এক ভক্ত লিখেছেন, ‘আপনার অভিনয় সব সময় নাটকে নতুন প্রাণ এনে দিত। আপনার নাটক দেখা আমাদের সবার জন্য খুব আনন্দের বিষয় ছিল। আমরা সত্যিই চাই আপনি আবার আগের মতো নাটকে ফিরে আসুন।’
একটি সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দিয়ে আরেক ভক্ত লিখেছেন, ‘আপনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, শৈশব থেকেই অভিনয় ভালোবাসতেন। অভিনয়ের প্রতি এতটাই ঝোঁক ছিল যে আপনি অভিনেতা হওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে বাসে ঝুলে চলে আসতেন ঢাকায়। আরণ্যক নাট্যদলে অভিনয় শিখতেন। কোথায় থেকে বেড়ে উঠেছেন, সেই দিনগুলো কি ভুলে গেছেন?’

আ খ ম হাসান প্রথম আলোর একটি সাক্ষাৎকারেও বলেছিলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ থেকে বেশির ভাগ দিন সিট না পেয়ে বাসে ঝুলে অভিনয় শিখতে আসতাম ঢাকায়।’ সেই অভিনেতা ২০০০ সাল–পরবর্তী সময়ে মঞ্চে ‘রাঢ়াঙ’সহ বেশ কিছু নাটকেও প্রশংসিত হন। অভিনয় শিখে পরে নাম লেখান টেলিভিশন নাটকে। টেলিভিশনে তাঁর ভাগ্য বদলে দেয় ‘রঙের মানুষ’ ধারাবাহিক নাটক।

পরবর্তী সময়ে ‘ভবের হাট’ তাঁকে আলাদা করে জনপ্রিয় করে তোলে। সেই সময়ে এ টি এম শামসুজ্জামান, হুমায়ূন ফরীদি, মোশাররফ করিম, চঞ্চলসহ অন্য সবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন। তখন সালাহউদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় একের পর এক কালজয়ী জনপ্রিয় নাটকে নাম লেখাতে থাকেন। সেই নাটকগুলো এখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউবে নিয়মিত দেখেন দর্শক।

সেই আ খ ম হাসানের বর্তমান অভিনয় নিয়ে ভক্তের মন্তব্যে রয়েছে অভিমানের সুর, কেউ কেউ বিরূপ মন্তব্য করে লিখেছেন, ‘একটা সময় চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিমদের অভিনয়ের থেকে আপনার অভিনয়ের মান কোনো অংশেই কম ছিল না। অনেক সময় আপনাকে এগিয়ে রাখতাম। কিন্তু বর্তমানে আপনি কোথায় আর তাঁরা কোথায়। আপনি রুচিহীন গল্প, পরিচালকদের নাটক না করে ভালো কিছু কাজ করেন। পুরোনো সেই আ খ ম হাসানকে খুব মিস করি। যাঁর একটা পাগলা ফ্যান ছিলাম বলা চলে।’

বেশ কয়েক বছর ধরে এই অভিনেতাকে অতিরঞ্জিত সব কমেডি নাটকে দেখা যাচ্ছে। নাটকের নাম নিয়েও ভক্তদের মনে প্রশ্ন রয়েছে। ‘দুষ্টু জামাই কিপটে শ্বশুর’, ‘তামিল দ্য হিরো’, ‘ছেচড়া জামাই’, ‘ফুটানি জামাই’, ‘বোকা জামাই’সহ এমন বহু নাটকের কথা বলা যায়। একসময়ের আলোচিত অভিনেতা আ খ ম হাসানের বর্তমান সময়ের কাজের মান নিয়ে ইলিয়াস হোসেন নামের একজন প্রিয় অভিনেতাকে উদ্দেশ করে চিঠি লিখেছেন।
ইলিয়াস হোসেন লিখেছেন, ‘হাসান ভাই, আপনি একজন কোয়ালিটিফুল অভিনেতা। কিন্তু ভাই ইদানীং আপনি অনেক অনভিজ্ঞ পরিচালকের সঙ্গে লো বাজেটের কিছু কিছু টিকটক লেভেলের কাজ করছেন। যেগুলো আপনার কোয়ালিটিকে নষ্ট করে দিচ্ছে।’ এই অভিনেতা ভক্তের মন্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে তাঁকে ধন্যবাদও দিয়েছেন।

ক্যারিয়ারের একাল–সেকাল নিয়ে প্রথম আলোর মুখোমুখি হলেন অভিনেতা হাসান। তিনি বলেন, ‘ছবিটি দর্শক পছন্দ করেছেন, এটা ভালো লেগেছে। দর্শকেরা সেই সময়ে আমার গেটআপ, ফ্যাশন–সচেতনতা দেখে মন্তব্য করছেন।’ তবে ছবিটি ঘিরে অনেকে ফিরেছেন অতীতের কাজে। এই অভিনেতার একসময়ের জনপ্রিয় নাটক নিয়ে কথা বলেছেন। সেগুলো নিয়েই বেশ বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।

অভিনেতা হাসান বলেন, ‘আগের ছবি দেখে ভক্তরা সেই “রঙের মানুষ”, “ভবের হাট”, “সাকিন সারিসুরি”, “হাড় কিপটে” নাটকসহ অনেক আগের নাটকগুলোর কথা বলছেন। এটা বেশ স্মৃতিকাতর করেছে। সবাই বলছেন আগের মতো নাটকের গল্পে পাচ্ছেন না। দর্শকপ্রিয় সেসব নাটকের চরিত্রের মতোই এখনো আমাকে দেখতে চান। দর্শকদের এই ভালোবাসা বার্ষিক পুরস্কার পাওয়ার চেয়েও হাজার গুণ দামি আমার কাছে। চরিত্রগুলো এখনো ভক্তরা মনে রেখেছেন, এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি একজন অভিনেতার জন্য কী হতে পারে?’

‘অনেক ভক্ত আপনার বর্তমান সময়ের কাজ নিয়ে অভিমান করেছেন, কেউ কেউ বলছেন এখন আপনাকে অনেক মানহীন কমেডি নাটকে দেখা যায়। যা আপনার কাছে অপ্রত্যাশিত’ এমন প্রশ্নে একমত হলেন আ খ ম হাসান। তিনি বলেন, ‘একসময় লাভলু ভাই, মোশাররফ করিম, চঞ্চল আমরা যেভাবে আন্তরিকতা, সময় ও শ্রম দিয়ে একটি কাজ করতাম। সেই একই রকম কাজ দর্শক চায়। কিন্তু কাজগুলো এখন আবার একসঙ্গে সম্ভব না। ভক্তদের অভিমান আছে ঠিক। আমি চেষ্টা করছি এখন সিরিয়াস অনেক গল্পে কাজ করতে। পরিচালকেরাও আমাকে ভিন্ন সব গল্পেই ডাকছেন। আশা করছি, এই কাজগুলো তাঁদের ভালো লাগবে।’

আ খ ম হাসান বর্তমানে ঈদুল আজহার শুটিং নিয়েই ব্যস্ত। সম্প্রতি ফিরেছেন কক্সবাজার থেকে নাটকের শুটিং শেষ করে। এখন টানা ঈদের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন।

Lading . . .