প্রকাশ: ১৯ মার্চ, ২০২৫

গ্ল্যামার–নির্ভর নয়; বরং সব সময় ব্যতিক্রম চরিত্রে দেখা দেন ভূমি পেড়নেকর। তবে এবার মেরে হাজব্যান্ড কি বিবি ছবিতে যেন সব ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। ভরপুর হাসির এই ছবিতে ভূমির সঙ্গে ছিলেন অর্জুন কাপুর ও রাকুল প্রীত সিং। মুদসসর আজিজ পরিচালিত ছবিটি বক্স অফিসে ভালো সাড়া পায়নি।
আমি জেদি মানুষ। কেউ যখন বলে যে আমার দ্বারা এই কাজ করা সম্ভব নয়, আমার মধ্যে তখন খুব জেদ পেয়ে বসে। নিজেকে প্রমাণ করার জন্য তখন যেকোনো পর্যায়ে যেতে পারি। আমি যখন অভিনেত্রী হওয়ার কথা জানাই, অনেক আত্মীয়–পরিজন তখন এ নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছিলেন। সত্যি বলতে, সেই সব নেতিবাচক শব্দ আমার ভেতরের আগুনকে আরও উসকে দিয়েছিল।ভূমি পেড়নেকর
তবে ভূমি খুশি, কেননা চরিত্রটি তাঁর মনে ধরেছে। মুম্বাইয়ের এক অভিজাত ক্লাবে প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির সঙ্গে আড্ডায় ভূমি বলেন, ‘একজন দর্শক হিসেবে আমি কমেডি ছবি দেখতে বেশি পছন্দ করি। আর তাই কমেডি ছবির অংশ হতে পারলে বেশি মজা পাই। ব্যক্তি হিসেবে আমি বিন্দাস আর সহজ স্বভাবের। তবে “মেরে হাজব্যান্ড কি বিবি” ছবিতে আমি প্রথমবার এ ধরনের কমেডি করার সুযোগ পেয়েছি। এ ধরনের চরিত্র সাধারণত মেয়েদের জন্য লেখা হয় না। রাকুল আর আমি এই ছবিতে অনেক কিছু করার সুযোগ পেয়েছি। কমেডির নানা রং, রূপ এই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে।’
‘মেরে হাজব্যান্ড কি বিবি’ ছবিতে ভূমি অভিনীত চরিত্রের নাম ‘প্রভলীন ধিলোঁ’। এই ছবিতে নিজের স্বামীকে ফিরে পাওয়ার জন্য তাঁকে লড়াই, ঝগড়া করতে দেখা গেছে। ব্যক্তিগত জীবনে কোনো সম্পর্ককে ফিরে পেতে ভূমি কী এতটা মরিয়া হতে পারেন? হেসে অভিনেত্রী বলেন, ‘না বাবা। আমি খুবই অলস মানুষ। তাই “প্রভলীন”-এর মতো এতটা কখনোই পারব না। আমি শুধু একটা জিনিসের জন্য পরিশ্রম করতে পারি, সেটা হলো অভিনয়। অভিনয় ছাড়া বাকি অন্য কিছুর জন্য পরিশ্রম করতে আমি মোটেও পছন্দ করি না।’
ভূমিকে একাধিক কমেডি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গেছে। সমসাময়িক অভিনেতাদের মধ্যে কমেডি ক্ষেত্রে রাজকুমার রাও তাঁর সবচেয়ে প্রিয়। কমেডি ছবি ‘বাঁধাই দো’-তে রাজকুমার রাওয়ের সঙ্গে ভূমিকে দেখা গিয়েছিল। ভূমি বলেন, ‘রাজকুমার (রাও) কমেডিতে অনবদ্য। “রকি অউর রানি কি প্রেমকাহানি” ছবিতে রণবীর সিংয়ের অভিনয় আমাকে মুগ্ধ করেছে। রণবীরের কারণে রকি চরিত্রটা আইকনিক হয়ে উঠেছে। আয়ুষ্মান খুরানা কমেডিতে দুর্দান্ত। কমেডি চরিত্রে কার্তিক আরিয়ান ভালো কাজ করছে। অক্ষয় (কুমার) স্যার পর্দার বাইরে খুবই রসিক মানুষ, আর পর্দাতে সেটা ধরা পড়ে। অনেক অভিনেতার মধ্যে মানুষকে হাসানোর এক সহজাত প্রতিভা থাকে। আমার মনে হয়, অক্ষয় স্যারের মধ্যে এটা আছে।’
ভূমি মনে করেন, নব্বই দশকের অভিনেত্রীরা কমেডি করার বেশি সুযোগ পেতেন। এখনকার অভিনেত্রীরা সেই তুলনায় কম সুযোগ পান বলে তাঁর মতামত। কমেডি অভিনেত্রী হিসেবে সবার শীর্ষে শ্রীদেবীকে রাখতে চান ভূমি। তাঁর মতে, ‘কমেডি ক্ষেত্রে শ্রীদেবীজি অতুলনীয় ছিলেন। ওনার সঙ্গে কারও তুলনা হয় না। ডেভিড ধাওয়ানের কমেডি ছবিতে কারিশমা কাপুর, রাভিনা ট্যান্ডন দুর্দান্ত ছিলেন। “বালা” ছবিতে ইয়ামি গৌতম বেশ ভালো কাজ করেছেন।’
অভিনয়জীবনের ১০ বছর পার করে ফেলেছেন ভূমি। এই ১০ বছরে সবচেয়ে সেরা পুরস্কার কী পেয়েছেন, জবাবে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি আজও সেই পেশার সঙ্গে যুক্ত, যা আমি অত্যন্ত ভালোবাসি। রোজ সকালে উঠে সেই কাজ করতে যাই, যা আমার পছন্দের। এর থেকে ভালো পুরস্কার আর কীই–বা হতে পারে। তাই আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।’
ইন্ডাস্ট্রির বাইরে থেকে এসে ভূমি আজ বলিউড সাম্রাজ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তবে অভিনয়জগতে আসার আগে তাঁকে নানা নেতিবাচক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে ভূমি বলেন, ‘আমি জেদি মানুষ। কেউ যখন বলে যে আমার দ্বারা এই কাজ করা সম্ভব নয়, আমার মধ্যে তখন খুব জেদ পেয়ে বসে। নিজেকে প্রমাণ করার জন্য তখন যেকোনো পর্যায়ে যেতে পারি। আমি যখন অভিনেত্রী হওয়ার কথা জানাই, অনেক আত্মীয়–পরিজন তখন এ নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছিলেন। সত্যি বলতে, সেই সব নেতিবাচক শব্দ আমার ভেতরের আগুনকে আরও উসকে দিয়েছিল। আজ সেই সব আত্মীয় আমাকে নিয়ে গর্ববোধ করেন। এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে।’
১০ বছরের অভিনয়জীবনে সফলতা আর ব্যর্থতা—দুইয়ের স্বাদ নিয়েছেন ভূমি। অভিনেত্রী জানান, ‘আমি আমার প্রতিটি সফলতা থেকে শিখেছি, আবার প্রতিটা ব্যর্থতা থেকেও শিখেছি। এই ভ্রমণের মাধ্যমে আমি বেশ কিছু ভালো বন্ধু পেয়েছি। অনেক ভালো ভালো পরিচালক পেয়েছি, যাঁরা আমাকে সুযোগ দিয়েছেন। মুদসসর তাঁদের মধ্যে একজন। তাই আমার কোনো আফসোস নেই।’
অভিনেত্রী হিসেবে ভূমি নানা ঘরানায় অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন। তবে অ্যাকশনধর্মী ছবিতে তাঁকে দেখা যায়নি। আড্ডার শেষে অভিনেত্রী জানান যে অ্যাকশন ছবির অপেক্ষায় আছেন তিনি।