বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত রোগীদের ময়মনসিংহ মেডিকেলে মারধরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি, গ্রেপ্তার ২
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর, ২০২৪

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত রোগীদের মারধরের ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে হাসপাতালের দুজন ট্রলিবয়কে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈনউদ্দিন খান বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত রোগীদের জন্য হাসপাতালের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে আলাদাভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডের এক পাশে পেয়িং ওয়ার্ড। গত রোববার রাতে একজন ট্রলিবয়ের ওয়ার্ডে আলো জ্বালানো নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে ঘটনার সূত্রপাত। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে দুজন ট্রলিবয়কে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দুজনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দুজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আজ চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা জানান, রোববার রাতে হাসপাতালের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে আলো জ্বালানোকে কেন্দ্র করে আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত সৌদি সিকিউরিটি সার্ভিসের কর্মীরা পাঁচ রোগীকে মারধর করেন। এতে উত্তেজনা তৈরি হলে সেনাবাহিনী, পুলিশ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় হাসপাতালের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাস্টার মো. শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে গতকাল সোমবার চারজনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ট্রলিবয় রূহান হোসেন একজন রোগী নিয়ে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে আলো জ্বালিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত এক রোগী আলো জ্বালাতে নিষেধ করলে ট্রলিবয় রূহান আহত রোগীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে কথা–কাটাকাটি করেন। একপর্যায়ে রূহান অন্য ট্রলিবয়দের ডেকে এনে রোগীদের মারধর করেন।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রূহান হোসেন (২০) ও মোশারফ হোসেনকে (৩৬) গ্রেপ্তার করে গতকাল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম খান।
এদিকে এ ঘটনায় হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত প্রতিষ্ঠান সৌদি সিকিউরিটি সার্ভিসের দরপত্র বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহের সমন্বয়ক গকুল সূত্রধর মানিক। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে ফ্যাসিবাদের দোসর সৌদি সিকিউরিটি সার্ভিসের ঠিকাদার আবুল হাসেম ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট হাসপাতালে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছে। রোগীদের খাবারে অনিয়ম-দুর্নীতি করে তারা প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে। হাসপাতালে তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে অনুগত উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ দিয়ে বাণিজ্য করছে। অবিলম্বে তিনি সৌদি সিকিউরিটি সার্ভিসের দরপত্র বাতিল ও মারধরে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
অভিযোগের বিষয়ে সৌদি সিকিউরিটি সার্ভিসের ঠিকাদার আবুল হাসেম কোনো কথা বলতে রাজি হননি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক জাকিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।