শিক্ষার্থীর ‘ইউনিক আইডি’র উদ্ভাবক পরিমল সিনহার স্বীকৃতি মেলেনি
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর, ২০২৪

প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মৌলিক ও শিক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের জন্য সরকারি উদ্যোগে ‘ইউনিক আইডি’ চালু হয়েছে এক বছর আগে। এর অংশ হিসেবে একজন শিক্ষার্থীর বিপরীতে আছে একটি রোল নম্বর। প্রতিবছর শ্রেণির বদল ঘটলেও প্রত্যেক শ্রেণিতে একই রোল নম্বর ব্যবহার করতে হবে ওই শিক্ষার্থীকে। এমনকি শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ পূর্ণ হলে এই আইডি জাতীয় পরিচয়পত্রে রূপান্তরিত হবে।
‘ইউনিক আইডি’র উদ্যোগ সরকারি ব্যবস্থাপনায় চালুর সাত বছর আগে মাঠপর্যায়ে প্রথমে বাস্তবায়িত হয়েছিল সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায়। ২০১৬ সালে তৎকালীন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল চন্দ্র সিনহার ব্যক্তিগত উদ্ভাবন ও ভাবনা থেকেই উপজেলায় ‘ইউনিক আইডি’ বাস্তবায়িত হয়। পরে একই ধরনের উদ্যোগই সরকারিভাবে বিস্তৃত পরিসরে সারা দেশে ছড়িয়েছে।
এখন সারা দেশে ইউনিক আইডি চালু হয়েছে। উদ্যোগের প্রবর্তক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে সরকারের সংশ্লিষ্ট নানা দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু ফল পাইনি।পরিমল চন্দ্র সিনহা, ইউনিক আইডির উদ্ভাবক
পরিমল চন্দ্র সিনহা ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল চাকরি থেকে অবসরে যান। তিনি দাবি করেন, তাঁর উদ্ভাবিত ও প্রবর্তিত ‘ইউনিক আইডি’র আইডিয়া থেকে সরকার পরবর্তী সময়ে সারা দেশে এমন কার্যক্রম বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে। অথচ উদ্ভাবনের প্রবর্তক হিসেবে তিনি কোনো স্বীকৃতি পাননি। তবে তিনি সরকারের এটুআই প্রকল্প, সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ‘ইনোভেশন শোকেসিং’ শীর্ষক সম্মাননা সনদ পেয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিমল চন্দ্র ২০১৫ সালে ‘এটুআই’-এর সহযোগিতায় ও উপজেলা প্রশাসন থেকে বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে শান্তিগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় ‘ডিজিটাল শিশু জরিপ ও শতভাগ ভর্তি’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। প্রকল্পের আওতায় সব সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে বিনা মূল্যে ভর্তি খাতা বিতরণ করা হয়। কর্মরত শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিমল চন্দ্র প্রতিটি গ্রামের সদ্যভূমিষ্ঠ শিশু থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের নাম ও পরিচিতি রেজিস্টার খাতায় নথিভুক্ত করান। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় উপজেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকের নাম ও মুঠোফোন নম্বর, ঠিকানা, ছবি, শ্রেণি, বিদ্যালয়সহ নানা তথ্য একটি নির্দিষ্ট খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বিপরীতে একটি করে আইডি নম্বরও দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি এমন কার্যক্রম উপজেলাটিতে বাস্তবায়িত হয়। উদ্ভাবনটি ‘এক আইডি এক শিশু’ ও ‘ইউনিক আইডি’ নামে পরিচিতি পায়।
পরিমল চন্দ্রের উদ্যোগে শিশু জরিপ সফলভাবে শেষ হলে উপজেলার জরিপ করা সব শিশুর তথ্যাদি নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হয়। ২০১৬ সালের ৮ এপ্রিল তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। এ ছাড়া এটুআই প্রকল্প থেকে পরিমল চন্দ্রকে সনদ দিয়ে অভিনন্দনও জানানো হয়। মূলত এমন উদ্ভাবনকেই কিছুটা আধুনিক করে ২০২৩ সালে সরকারিভাবে ইউনিক আইডি চালু হয়।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুরে পরিমল চন্দ্র সিনহার বাড়ি। এখন বসবাস করছেন সিলেট নগরের লালাদিঘিরপার এলাকায়। ১৯৭৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি গোয়াইনঘাট উপজেলার বহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে একাধিকবার পদোন্নতি পেয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হন। ‘ডিজিটাল শিশু জরিপ ও শতভাগ ভর্তি’ শীর্ষক প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য জেলার শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাও হয়েছেন তিনি।
পরিমল চন্দ্র সিনহা প্রথম আলো কে বলেন, ইউনিক আইডি প্রকল্প যখন তিনি বাস্তবায়ন করেন, তখন এমন ধারণার প্রচলনই ছিল না। এটি বাস্তবায়নের পর জেলা, বিভাগ ও রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক আয়োজনে এমন জরিপ সারা দেশে চালুর বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। এটি সারা দেশে বাস্তবায়নের আশ্বাসও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তখন দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘এখন সারা দেশে ইউনিক আইডি চালু হয়েছে। উদ্যোগের প্রবর্তক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে সরকারের সংশ্লিষ্ট নানা দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু ফল পাইনি।’
শান্তিগঞ্জের মুক্তাখাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালেহ আহমদ বলেন, ‘স্যার (পরিমল) সেই ২০১৬ সালে আমাদের মাধ্যমে ডিজিটাল শিশু জরিপ করে ইউনিক আইডির অভিনব বিষয়টি উদ্ভাবন করেছিলেন। আমরা মনে-প্রাণে চাই, তাঁর উদ্ভাবনের স্বীকৃতি আসুক।’
আরও পড়ুন