বাসের ধাক্কায় পিকআপ ভ্যান উল্টে শিশু নিহত, আহত ৭
প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বাসের ধাক্কায় একটি পিকআপ ভ্যান উল্টে শিশু নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন শিশুটির মা-বাবাসহ আরও সাতজন। আজ সকাল ছয়টার দিকে উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের চৌধুরী মার্কেট এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত শিশুর নাম জাকিয়া ইসলাম (৫)। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুটির বাবা জামাল উদ্দিন (৩৮), মা লাইজু বেগম (৩০), ভাই মো. ফয়সাল (১৪), নানি সেলিনা বেগম (৬০), খালা রিমা আক্তার (২৮) ও খালাতো বোন সুমাইয়া আক্তার (৫) ও গাড়ির চালক মো. রায়হান (২৪)।
হতাহত ব্যক্তিরা সবাই পিকআপ ভ্যানটিতে ছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাঁদের ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার করে। এরপর প্রথমে তাঁদের সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহত জাকিয়ার বাবা জামাল উদ্দিন ভোলার বাসিন্দা। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় বসবাস করে আসছেন। সম্প্রতি চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়েছেন জামাল উদ্দিন। তাই পরিবারসহ চট্টগ্রামে স্থানান্তর হচ্ছিলেন তিনি। আসবাবসহ মালামাল পিকআপ ভ্যানটিতে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পিকআপের সামনে চালক ও সহকারী বসা ছিলেন। জামাল উদ্দিন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা পিকআপ ভ্যানের পেছনে রাখা মালামালের ওপর বসে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, বাঁশবাড়িয়া এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস পিকআপ ভ্যানটিকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছিল। এর একপর্যায়ে বাসটির পেছনের অংশের সঙ্গে পিকআপ ভ্যানটির ধাক্কা লাগে। এ সময় পিকআপ ভ্যানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে উল্টে যায়। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই শিশুটি নিহত হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, চৌধুরী মার্কেট এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনে কাত হয়ে পড়ে আছে আসবাবভর্তি পিকআপ ভ্যানটি। শিশু জাকিয়ার লাশ উদ্ধার করে পাশে রেখেছে ফায়ার সার্ভিস। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটি উদ্ধার করছিলেন হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা। এতে মহাসড়কে যান চলাচল কিছুক্ষণের জন্য ব্যাহত হয়।
দুর্ঘটনাস্থলে মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় একটি অ্যাম্বুলেন্সে বসে রয়েছেন জামাল উদ্দিন। দুজন রয়েছেন শোয়া অবস্থায়। হাইওয়ে পুলিশের সদস্যদের দেখে বারবার মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করছিলেন জামাল উদ্দিন। কাউকে দেখলেই জানতে চাইছেন, ‘ভাই আমার মেয়ে কোথায়?’
জানতে চাইলে জামাল উদ্দিন বলেন, ঢাকার আশুলিয়ায় একটি কারখানায় চাকরি করতেন তিনি। কিছুদিন আগে চাকরি চলে যায়। এরপর বেকার হয়ে পড়েন। সম্প্রতি চট্টগ্রামে পরিচিত এক স্বজনের মাধ্যমে একটি চাকরি পেয়েছেন। তাই পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামে স্থানান্তর হচ্ছিলেন। আহাজারি করতে করতে জামাল উদ্দিন বলেন, ‘ভাই আমার সব শেষ হয়ে গেল। চাকরিও গেল, মেয়েটাও গেল। মাথার খুলি ফেটে মগজ বের হয়ে গেছে মেয়েটার।’
ঘটনাস্থলে থাকা হাইওয়ে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক মিন্টু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটি তাঁরা উদ্ধার করেছেন। দুর্ঘটনার পর বাসটি নিয়ে চালক পালিয়ে গেছেন। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বাসটি শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।